কুড়মি সমাজের প্রধান ভাষা
কুড়মি মাহাতোদের ভাষা মূলত কুড়মালি। তবে বাংলাদেশের যে অঞ্চলে তারা বসবাস করে, সেই অঞ্চলের মুসলিমেরা এদের ভাষাকে মাহাতোদের নামানুসারে মাহাতো ভাষা বলে। কিন্তু আসলে তাদের ভাষার নাম কুড়মালি ভাষা। কুড়মি জনগোষ্ঠীর নাম অনুসারে এদের ভাষার নাম কুড়মালি ভাষা। নিজেদের মধ্যে এই মাহাতোরা কুড়মালি ভাষায় কথা বলে যা বিহারী ভাষাদলের অধীনস্থ একটি ইন্দো-আর্য শ্রেণীভুক্ত ভাষা। যদিও আধুুনিক গবেষকদের একাংশ গবেষক মনে করেন, মুল কুড়মালি ভাষার উৎস আর্য, দ্রাবিড়, এমনকি মুন্ডা অস্ট্রিক কোনো ভাষা পরিবারের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় না।[৩২] [৩৩] পূর্ব ভারতে ব্যবহৃত এই ভাষাটি ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুড়মি মাহাতো সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত। কুড়মালি ভাষাটি চর্যাপদে ব্যবহৃত ভাষার নিকটতম রূপ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন।[৩৪] কুড়মালি ভাষার নিজস্ব কোন বর্ণমালা এখনো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাহাতোরা নিজ ভাষায় কথা বলতে খুবই গর্ববোধ করে তাছাড়াও তারা বাংলা এবং স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শিখলেও সবাই বাংলায় কথা বলতে পারে না। যারা অন্য সমাজের সাথে মেশে না এরকম কিছু বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে তা বেশি দেখা যায়। জন্মের পর এরা সাধারণত শিশুদের মাতৃভাষা হিসেবে কুড়মালি ভাষা শেখায় কারণ তারা পরিবারে সবাই এই ভাষায় কথা বলে। কেবল মাত্র অন্য সমাজের লোকদের সাথে কথা বলার সময় বাংলাভাষা ব্যবহার করে। এ সমাজের শিশুরা প্রথমে কুড়মালি মাহাতো ভাষায় কথা বলে পরে এরা স্কুল ও বড়দের কাছে বাংলা ভাষা শেখে। বাংলাদেশে কুড়মালি ভাষায় পূর্বে তেমন কোন লেখালেখি না থাকলেও এখন লেখালেখি হচ্ছে। এই ভাষায় প্রথম উপন্যাস রচনার প্রয়াস করেন কুড়মালি ভাষার লেখক ও গবেষক উজ্জল মাহাতো। বাংলাদেশে কুড়মালি ভাষার প্রথম উপন্যাস ‘কারাম’।[৩৫] যা কুড়মালি ভাষা প্রচার ও প্রসারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরে তিনিই এই ভাষার ডিকশনারি রচনা করেন। তার প্রকাশিত 'কঁআথুয়েঁনঃ মাহাতো ডিকশনারি' নামের কুড়মালি ভাষায় রচিত একটি গ্রন্থে সংযুক্ত করা হয় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ। এটি ভিন্ন ভাষায় ১৩ তম এবং ক্ষুদ্র নৃ তাত্ত্বিক ভাষায় প্রথম অনুবাদ।
জয় গরাম
সমাজকর্মী আন্দোলনকারীর নাম -
১) অসিত মাহাত
২) রাজেশ্বর মাহাত
0 Comments